ঢাকারবিবার , ২৮ জুলাই ২০২৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মাদ্রাসা কেরানির ভয়ংকর প্রতারণা : চাকরী দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্ধ কোটি টাকা!

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
জুলাই ২৮, ২০২৪ ৯:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করলেও দুর্নীতিবাজদের দমন করা যাচ্ছে না। দুর্নীতির মাধ্যমে এরা অবৈধ সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠছে। এর ফলে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা যেমনি ব্যহত হচ্ছে তেমনি অর্থনীতিতে পড়ছে বিরুপ প্রভাব। পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জে এমনই এক দুর্নীতিবাজের উত্থান ঘটেছে। ঘুস-দুর্নীতি আর নিয়োগ বাণিজ্যে কোটিপতি হওয়া এই ব্যক্তি হচ্ছেন পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানার ঘটকের আন্দুয়া (মানসুরাবাদ) গ্রামের আমজেদ জোমাদ্দারের পুত্র কবির সুলতান। তিনি চাকরি করতেন সুন্দ্রা কালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কেরানী পদে। ছিলেন মানসুরাবাদ আলীম মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। এই পদটিকেই কেরানী কবির টাকা বানানোর মেশিন বানিয়ে ফেলেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদে থেকে সাধারণ মানুষকে চাকরি প্রলোভন দিয়ে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। ভুক্তভোগীদের তথ্য মতে মানসুরাবাদ আলীম মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, চতুর্থ শ্রেণির এবং কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়কসহ ৮ জন লোক নিয়োগ দেওয়ার একটি বিজ্ঞপ্তি দেখান কবির সুলতান। গত ০৬/০১/২০২৩ইং তারিখ ‘দৈনিক গণদাবী’ পত্রিকার একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়েই তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে ভুক্তভোগী মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাকে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব করেন কবির সুলতান। চাকরি দেয়ার প্রস্তাবে আমি রাজি হলে তিনি আমার কাছে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি বলেন, এই টাকা কয়েক ক্ষেত্রে বণ্টন করতে হবে। আমি বেকার বিধায় তার দেয়া প্রস্তাবে ৭ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি পেতে রাজি হই। কবির সুলতান অগ্রীম বাবদ ৪ লাখ টাকা দাবী করলে আমি ৩নং আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানকে সাক্ষী রেখে কবির সুলতানকে নগদে ৪ লাখ টাকা প্রদান করি। এ সময় কবির সুলতান ১৫ দিনের মধ্যে আমাকে চাকরি দিবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। তার দেয়া ১৫ দিনের প্রতিশ্রুতি পার হয়ে ২/৩ মাস অতিক্রান্ত হলেও কবির সুলতান আমাকে চাকরি দেননি। পরবর্তীতে আমি লোক মারফতে জানতে পারি তিনি অন্য একজনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে তাকে চাকরি দিয়েছেন।
এরপর আমি যতোবারই চাকরির কথা বলি তিনি ততোবারই নানান তালবাহানায় আমাকে ঘোরাতে থাকেন। তার বাড়ি গিয়ে এবং ফোন করেও কেনোভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পরিনি। টাকার জন্য তার বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী-স্বজনরা কবির সুলতানের কোনো খোঁজ আমাকে দেননি। আমি এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারি কবির সুলতান ঢাকায় আত্মগোপন করে আছেন।
কবির সুলতান একই নিয়োগ এর কথা বলে ভাজনা কদমতলা নিবাসি আলমগীর সিকদারের এর কাছ থেকে নিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। মানসুরাবাদ নিবাসি সোহেল সিকদারের কাছ থেকে নিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। পিপড়াখালী নিবাসি আল মামুনের কাছ থেকে নিয়েছেন ৪ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল মাহবুবুর রহমানই না কবির সুলতান বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। কবির সুলতান তার এই নিয়োগ বাণিজ্যে সুকৌশলে মানসুরাবাদ আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি জুয়েল বেপারীর নাম ভাঙ্গিয়েছেন। এ প্রতিবেদক মানসুরাবাদ আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি জুয়েল বেপারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমরা এর কোনো কিছুই জানিনা। কেউ যদি আমাদের নাম ব্যবহার করে থাকে তা হীন স্বার্থেই করেছে। তবে ভুক্তভোগী সূত্রে জানতে পেরেছি কবির সুলতান বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মাদ্রাসায় চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন অংকের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।
প্রতিবেদকের আরেক প্রশ্নে মানসুরাবাদ আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি জুয়েল বেপারী বলেন, আমাদের নামে কবির সুলতান মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। কবির সুলতান চাকরি দেয়ার নামে টাকা নিয়েছেন মর্মে বিষয়টি পরিষ্কার হয় যখন ভুক্তভোগী একজন সালিস ডাকেন। আমাদের উপস্থিতিতেই মিমাংসার লক্ষ্যে ভাজনা কদমতলা নিবাসি ভুক্তভোগী আলমগীর সিকদারের এর কাছ থেকে নেয়া ৬ লাখ টাকার বিষয় সামনে আসে। মিমাংসার বৈঠকে সুলতান কবির আলমগীর সিকদারের দেয়া ৬ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ লাখ টাকার ৮/২/২০২৪ তারিখের অগ্রণী ব্যাংক সুবদখালী শাখার একটি চেক দেন। আর বাকী ৩ লাখ লাখ টাকা ১০ দিনের মধ্যে নগদ ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সালিশ মিমাংসার পর থেকেই লাপাত্তা হয়ে যান কবির সুলতান। আলমগীর সিকদার চেকের টাকা তুলতে গেলে ব্যাংক জানায় একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। আলমগীর সিকদার চেকের টাকা তো পাননি, নগদ টাকাওনা। সুলতান কবিরের কাছ থেকে টাকার তোলার জন্য আলমগীর সিকদার ঢাকা-পটুয়াখালী ছুঁটে বেড়াচ্ছেন। আলমগীর সিকদার অবশেষে ২১/০৫/২০২৪ তারিখে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে এন আই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় মামলা করেন। মামলা নং সিআর ১৬৩/২০২৪।
আরো জানা গেছে, ধুরন্ধর কবির সুলতান ভুক্তভোগী আলমগীর সিকদারের টাকা ফেরততো দেনইনি উল্টো আলমগীর সিকদারকে হয়রানি করার লক্ষ্যে মারামারির একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। কবির সুলতান শুধু চাকরির নামে প্রতারণা করেছেন এমন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মানসুরাবাদ আলীম মাদ্রাসা ও মসজিদের ফান্ড থেকে টাকা ধার নিয়ে সে টাকাও ফেরত না দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন। মাদ্রাসার এতিমদের জন্য বাজার সদাই কিনেছেন সুবিদখালী বাজারের ব্যবসায়ী আবু বেপারীর দোকান থেকে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিলেও ব্যবসায়ী আবু বেপারীর পাওনা ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ব্যাপারে আবু বেপারী বলেন, আমার পাওনা টাকা না পেয়ে যোগাযোগ করি মাদ্রাসার সভাপতির জুয়েল বেপারীর সাথে। সভাপতি বলেন, আমরা কখনো বাকিতে কেনাকাটা করি না। কবির সুলতান কেনাকাটায় নগদ টাকা নিয়ে কার কাছ থেকে বাকি নিয়েছেন বা কাকে টাকা দেননি এটি তার বিষয়। সূত্রমতে, সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে মাদ্রাসার এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত কেপিটেশনের প্রায় ৫ লাখ টাকাও কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন কবির সুলতান। কেরানী কবির সুলতান সুবিদখালীর বিদ্যুৎ অফিসের একজন চিহ্নিত দালাল। এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারির যোগসাজসে কবির সুলতান গ্রাহক হয়রানির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। কারো বিদুৎ লাইন বন্ধ করে, কারো অতিরিক্ত বিলিং করে, নতুন বিদুৎ সংযোগ দেয়ার বেলায় ঝুলিয়ে রেখে গ্রাহকদের হয়রানি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ধুরন্ধর এই প্রতারক সম্পর্কে এলাকাবাসী বলেন, অর্থলোপাটকারী কবির সুলতান অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। তারা কবির সুলতানকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন।