ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনার নদীর তীরে থাকা অর্ধশতাধিক মাছ ধরার ছোট নৌকা বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় ডুবে গেছে বেশ কয়েকটি নৌকা। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঝড়ের তাণ্ডবে ওই এলাকার অন্তত ২০টি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। চরগাজী ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সজিব জমিদার বাংলানিউজকে বলেন, দুপুরে পর ঝড়ো বাতাসের তীব্রতা বাড়ে। নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। ঢেউয়ের তোড়ে বড়খেরী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে থাকা বেদে সম্প্রদায়ের ৫০টির বেশি নৌকা বিধ্বস্ত হয় ও বেশ কিছু নৌকা ডুবেও যায়। এতে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, চরগাজী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বয়ারচর এলাকার দিকে ২০টির বেশি টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন বাংলানিউজকে বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা নদীর তীরে ছোট ছোট নৌকা রেখে সেগুলোতে বসবাস করেন। নৌকাগুলো দিয়ে তারা মাছ শিকার করেও জীবিকা নির্বাহ করেন। ঝড়ের তাণ্ডবে বেশ কিছু নৌকা ডুবে গেছে তাদের। আবার বেশ কিছু নৌকা ভেঙে গেছে। সবমিলিয়ে অর্ধশতাধিক নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তিনি বলেন, আমার এলাকায় ১৫-২০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে পুরোপুরি সঠিক তথ্য এখনও পাইনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। কিছু গাছপালাও উপড়ে পড়েছে।
রামগতি নৌ-পুলিশের ইনচার্জ (পরিদর্শক) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে অর্ধশতাধিক নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নৌকাতে কোনো লোকজন ছিল না। তাই কোনো প্রাণহানির খবর পাইনি। ঝড়ের নদীর তীরে থাকা একটি মামলায় আমাদের জব্দকৃত একটি নৌকাও ডুবে গেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে জেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ক্ষেতে থাকা আমন ধানের গাছ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শীতকালীন সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ব্যাহত হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবাও। পৌরসভা শহরের বাসিন্দা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) গ্রাহক মো. ওবায়েদুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাত ২টার পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। কখন আসবে তাও জানা নেই। দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একই এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লা-আল-হাদী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার দুপুরের পর ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সঙ্গে ঝড়ো বাতাস ছিল। এতে বিভিন্নস্থানে গাছাপালা ভেঙে পড়েছে। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলসহ চলাচলের পথঘাট।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুছ মিয়া বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও আমার কাছে আসেনি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে পাঠানো হবে।