মিয়ানমারে জান্তা সরকারের সময় যে ফুরিয়ে আসছে সে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেই। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর তোপের মুখে সামরিক শাসকরা এখন অনেকটাই কোণঠাসা। এরমধ্যেই এবার মিয়ানমারের উত্তর শান রাজ্যে আগামী বছরের মধ্যে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী পালাউং স্টেট লিবারেশন ফ্রন্ট (পিএসএলএফ)।
গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা আগামী বছরের মধ্যে সরকার গঠন করবে। মিয়ানমারের উত্তর শান রাজ্যের ৭টি শহরে এ সরকার গঠনের কথা জানানো হয়েছে। পিএসএলএফ মূলত তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) রাজনৈতিক শাখা। এটি ১৯৯২ সালে থাইল্যান্ড সীমান্তে গঠিত হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে উত্তর শান রাজ্য থেকে তাদের তৎপরতা শুরু করে জোটটি। তাদের হাতে এখন পর্যন্ত জান্তার ২০টি শহর ও চীন সীমান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটের পতন হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের সূত্র মতে সরকার গঠনের জন্য গোষ্ঠীটি ইতোমধ্যে টিএনএলএ নামসান, মানটং, নামকেম, কুতকাই, নামতু, মংল ও মঙ্গজিউয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এর আগে গোষ্ঠীটির প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল টার আইক বং জানুয়ারিতে তায়াং জাতীয় বিপ্লব দিবসের বক্তৃতায় তায়াং বাস্তুচ্যুতদের স্বাধীন হওয়া এলাকা পুনর্গঠনে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীন হওয়া এলাকাগুলো পুনর্গঠনে আমরা জনগণকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো সহায়তা প্রদানের জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই। জানুয়ারি থেকেই এ গোষ্ঠীটি কুতকাই ও নামতুতে প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির জন্য কাজ শুরু করেছে। টিএনএলএ নিরাপত্তা, আইনের শাসন, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।
এদিকে রাখাইনকে শিগগিরই ‘জান্তামুক্ত’ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা খুব শিগগিরই আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করবে। জান্তা সেনাদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে আরাকান আর্মি।
বিদোহীদের হামলার মুখে মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ঘাঁটি হারাতে শুরু করে শক্তিশালী জান্তা বাহিনী। বিদ্রোহীদের হামলায় এ পর্যন্ত অনেক জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। লড়াইয়ে টিকতে না পেরে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতেও পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। সেখানে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক লড়াই চলছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির। রাজ্যটিতে জান্তাদের সব ক্যাম্প দখল করতে আর মাত্র কয়েকদিন লাগবে। সেখানে এখন মাত্র ১০০ জনের মতো জান্তা সেনা অবস্থান করছে।