একটি হত্যা ও অপর একটি হত্যা চেষ্টা মামলার প্রধান আসামির যোগসাজশে রাজধানীর লালবাগ থানার এক দারোগা মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী মো. জসিম। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, স্ত্রী-সন্তানদের সামনেই তাকে টেনে হেঁচড়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এসআই সুব্রত। এলাকাবাসীর অনুরোধ ও বাধায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ছেড়ে দিলেও তাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করায় পরিবার নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ী মো. জসিম লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছেন, গত ১৯ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা লোক ৮৯/২ নম্বর বাসভবনের তার নিজ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে তাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আগত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে একজন নিজেকে লালবাগ থানার এসআই সুব্রত বলে পরিচয় দিয়ে তাকে তার স্ত্রী-সন্তানদের সামনে প্রহার করে থানায় নিয়ে যেতে চান। জসিম কারণ জানতে চাইলে সুব্রত প্রথমে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগ করেন। এ সময় সুব্রতর সঙ্গীরা তল্লাশির নামে তার ফ্ল্যাটে তাণ্ডব চালায়। পরে ওই ভবনের লোকজন এলে সুব্রত জানায়, সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে জসিমকে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। এ সময় প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী জসিম সম্পর্কে অত্যন্ত স্বজ্জন এবং ভদ্রলোক হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু এসআই সুব্রত তাকে টেনে হেঁচড়ে রাস্তায় নামিয়ে আনেন। এলাকাবাসী এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ‘এক মাঘে শীত যায় না’ এমন উক্তি করে জসিমকে দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়ে সদলবলে এলাকা ত্যাগ করেন। ব্যবসায়ী জসিম ওই রাতেই ঘটনার বিস্তারিত জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেনকে। তিনি এসআই সুব্রতকে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বললে সুব্রত কোন সদুত্তর দিতে না পারায় ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বললে পরদিন জসিম এসআই সুব্রতর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ব্যবসায়ী মো. জসিম জানান, ঘটনার রাতে উপ-পুলিশ কমিশনারকে বিস্তারিত জানানোর পর এসআই সুব্রত তার বাসায় গিয়ে তার খোঁজ করেন। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে নানান ভয়ভীতি দেখান এবং এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। এসআই সুব্রত আরো হুমকি দিয়ে বলেন, ঘটনা পাঁচকান হলে তাদের পুরো পরিবারকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে ব্যবসায়ী জসিম আরো জানান, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বাসিন্দা মো. জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টা মামলার এক নম্বর আসামি এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় রানা হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামী আফ্রিকা লিটন ঘটনার কয়েকদিন আগে তাকে ফেসবুকে জাফরের বিপক্ষে বাজে মন্তব্য করতে বলে। জসিম রাজি না হওয়ায় লিটন জানায়, গুর্দা হাফিজ, ফেন্সি মোহম্মদ আলী, কুচা ওহিদুল ও কারেন্ট ছাদেকসহ অনেকেই তার পক্ষে আছে। পিবিআই ও সিআইডি জাফরের পক্ষে কাজ করলেও তার টিকিটাও স্পর্শ করতে পারবে না। তাই বন্ধু হিসেবে তার পক্ষে এবং জাফরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কিছু মন্তব্য করলে কোন ক্ষতি হবে না। জসিম এমন অনৈতিক কাজ করতে অস্বীকার করায় আফ্রিকা লিটন তাকে পুলিশ দিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। জসিমের ধারণা আফ্রিকা লিটনের মদদেই লালবাগ থানার দারোগা সুব্রত তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। সুব্রত আগামীতেও চেষ্টা করবে বলে আশংকা করছেন ব্যবসায়ী জসিম।
এ বিষয়ে লালবাগ থানার সাব ইন্সপেক্টর সুব্রত’র সাথে তার মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় তিনি ডিউটিরত ছিলেন। তিনি জসিমের বাসায় যাননি। রাস্তায় তার সাথে কথা হয়েছে। সুব্রত আরো বলেন, মি. জসিম আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আফ্রিকা লিটন বা গুর্দা হাফিজ নামে কাউকে তিনি চিনেন না বলেও জানিয়েছেন এসআই সুব্রত।