সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার হলে বাংলাদেশে উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে বেসরকারি খাতে মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা বাড়বে। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঢাকায় সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের বৈঠকের আলোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডাটা সেন্টার এবং পরিবহন খাত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে।
এর আগে শনিবার সকালে তিনদিনের সফরে আজ ঢাকা পোঁছেছে উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদল। বিকালে আসবেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। আলোচনার হতে পারে নানা বিষয়ে। সফরে সম্পর্ক জোরদারসহ গুরুত্ব পাবে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার নানা বিষয়। মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন মার্কিন অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। শনিবার সকালে তারা শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ইউএসএইডের এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌরসহ আরও দুজন। সফরে প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
একটি সূত্র প্রতিবেদক জানিয়েছে, সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের একটি বৈঠক রয়েছে। দলটির সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়ার্কিং লাঞ্চ করবে দলটি। পৃথকভাবে দলটির কয়েকজন সদস্যের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেকনিক্যাল মিটিং করার কথা রয়েছে।
জানা যায়, আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে। এছাড়া বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়ায়, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন। তবে ডোনাল্ড লু ঢাকা আসছেন দিল্লি হয়ে। সেখানে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষাবিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন তিনি। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর পাশাপাশি আলোচনায় গুরুত্ব পায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা শুরুর আগে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যেটি আলোচনার স্বাভাবিকতা ক্ষুণ্ন করে।
আমি শুধু এটি বলতে পারি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রতিনিধিদল আসছে; তারা যে এ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, সেটির বড় প্রতিফলন ঘটছে এর মাধ্যমে। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের পরিচয় দেখলে বোঝা যায় এই আলোচনা বহুমাত্রিক হবে। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমিত থাকবে না। আমরাও এর সঙ্গে সংগতি রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্রে জানা যায়, এ সফরে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। এদিকে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঢাকার সঙ্গে নিরাপত্তাসহ আইপিএস ইস্যুতেও আলোচনায় আগ্রহী ওয়াশিংটন। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।