কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গভর্নর শ্রী তথাগত রায় বলেছেন,‘যে অসাধারণ লড়াই করে আপনারা (বাংলাদেশ) স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পেরেছেন এবং আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীরা স্বাধীনতার সেই স্বাদ দিতে পেরেছি সেজন্য নিজেদের গর্বিত মনে করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্র ভূমি এই বাংলাদেশে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুষ্টিয়া শহরতলীর চৌড়হাস মোড়ে মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণ করে ‘মুক্তি মিত্র স্মৃতিসৌধ’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন,‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বাংলাদেশের যুদ্ধের কথা রেডিওসহ মানুষের মুখে মুখে শুনতাম এবং রোমাঞ্চ অনুভূত হতো।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তা আরো বেশি বেশি করে বাড়ানো হবে উল্লেখ করে ত্রিপুরা রাজ্যের গভর্নর বলেন,‘ ৭১’এ দেশ স্বাধীনের সময় বাংলাদেশের পাশে ভারত ছিল। বর্তমানেও পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রয়োজনে সহযোগীতার হাত ৮শ থেকে বাড়িয়ে এক হাজারে উন্নীত করা হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন,‘যেসব বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকৃতি পায়নি তাদের আবারো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে আগামী জুন মাসে। তখন আবার নতুন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাড়িয়ে দিগুণ করছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ। আর তাই বিএনপির মুখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা মানায় না।’
পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন,‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রশাসনের সহযোগীতায় পৌর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে বলে আশা করি।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে ‘মুক্তি মিত্র স্মৃতিসৌধ’ এর উদ্বোধন করেন ত্রিপুরা রাজ্যের গভর্নর শ্রী তথাগত রায়। পরে স্মৃতিসৌধের চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এরপর কুষ্টিয়া পৌরসভা অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কুষ্টিয়া-৪(খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল হাকিম সরকার. কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন, পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ্ব জাহিদ হোসেন জাফর, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম রাহাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া ইউনিট কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হাজী মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা, মুক্তিযোদ্ধাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের এদিন ( ১০ ডিসেম্বর) পাকবাহিনীর সঙ্গে কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিসেনারা বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ শেষে বিজয়ের নিশান দেখেছে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংকবহর মুক্তিসেনাদের সহযোগিতা করতে কুষ্টিয়া অভিমুখে আসছে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনীর ওই ট্যাংকটিকে ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় পাকবাহিনীর একটা অংশও সেখানে এসে পড়ে। শুরু হয় ত্রিমুখী যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর প্রায় ৭০ জনসহ প্রায় দেড়শ জন মারা যায়।
কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২টি ছোট বড় যুদ্ধ শেষে কুষ্টিয়া মুক্ত হয়েছিল।
শহীদদের এ স্মৃতিকে ধরে রাখতে এ জেলার মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী মানুষেরা কুষ্টিয়া শহরতলী চৌড়হাসে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতার মাত্র কয়েক বছর পরেই। একে একে কেটে যায় অনেক বছর। কিন্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আর সহযোগীতার অভাবে সে উদ্যোগ কখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল খায়েরসহ কিছু প্রগতিশীল মানুষ শহরতলী চৌড়হাস মোড়ে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির কাজ শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে লালন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে আজ এই স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করা হয়।