সার্ভিকাল ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজগুলি করতে পারেন তা হলো এইচপিভির বিরুদ্ধে টিকা নেওয়া, নিয়মিত স্ক্রিনিং পরীক্ষা করা এবং আপনার স্ক্রিনিং পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক না হলে পুনরায় চিকিৎসা শুরু করা।
প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু মুখের ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব। এটি ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য প্রাক-ক্যানসার পর্যায়ে থাকে। যেহেতু এই রোগ বেশিরভাগ মহিলাদের মধ্যেই স্থায়ী। তাই তাঁদের প্রতি তিন বছর অন্তর একটি প্যাপ পরাক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও, ৩০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদেরও এইচপিভি পরীক্ষা করানো উচিত।
জরায়ু মুখের ক্যানসারের লক্ষণ
দুর্ভাগ্যবশত, প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ুর ক্যানসারের কোনো উপসর্গ নেই। ক্যানসার যখন উন্নত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তাই নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ শনাক্ত করা যায়। ঋতুস্রাবের অনিয়ম, মাসিকের বাইরে রক্তপাত, যৌন মিলনের পর রক্তপাত, মেনোপজের পর রক্তপাত, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব ইত্যাদি জরায়ুর ক্যানসারের লক্ষণ।
কীভাবে জরায়ুর ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়
চিকিৎসকরা বলেন যে, জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এইচপিভির বিরুদ্ধে টিকা নেওয়া উচিত। ৯ থেকে ২০ বছর বয়সী মেয়েদের এবং মহিলাদের জন্য এই টিকাটি উপলব্ধ। ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের দু’টি ইনজেকশন হিসাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এরপর ১৪ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের তিনটি ইনজেকশনের প্রয়োজন হয়। যাই হোক, টিকা দেওয়ার পরও নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রয়োজন। মনে রাখবেন, ভ্যাকসিন সার্ভিকাল ক্যানসারের বিরুদ্ধে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রক্ষা করে। অতএব, প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সময়মত চিকিৎসার জন্য স্ক্রিনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন
প্রায়শই সার্ভিকাল, যোনি এবং ভালভার ক্যানসারের কারণ হয় হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি)। এই টিকা ১১ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বরাদ্দ হলেও ৯ বছর বয়স থেকে এটি শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। এইচপিভি ভ্যাকসিনও ২৬ বছরের মধ্যে সকল মেয়েদের জন্য বরাদ্দ। ২৬ বছরের বেশি হয়ে গেলে এই টিকা দেওয়া হয় না।
তবে, ২৭ থেকে ৪৫ বছর বয়সী কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যদি এইচপিভি সংক্রমণের ঝুঁকির আন্দাজ করে থাকেন, তবে টিকা দেওয়ার সম্ভাব্য সুবিধা সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে। যদিও এই বয়সের ক্ষেত্রে এইচপিভি টিকা কম সুবিধা প্রদান করে।
উল্লেখ্য, এইচপিভি টিকা নতুন এইচপিভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, কিন্তু বিদ্যমান সংক্রমণ বা রোগের চিকিৎসা করে না। এই কারণেই এইচপিভি ভ্যাকসিন এইচপিভির সংস্পর্শে আসার আগে দেওয়া হলে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তবে, ভ্যাকসিনটি নিলেও সার্ভিকাল ক্যানসারের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত আপনার।
স্ক্রিনিং টেস্ট
মাত্র দু’টি স্ক্রিনিং টেস্টই প্রি-ক্যানসার বা সার্ভিকাল ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে।
প্যাপ টেস্ট (বা প্যাপ স্মিয়ার) জরায়ুর মুখের কোষের পরিবর্তনের খোঁজ দেয়, যা সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে সার্ভিকাল ক্যানসারে পরিণত হতে পারে।
এইচপিভি পরীক্ষা ওই ভাইরাসটির (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস) খোঁজ দেয়, যা এই কোষের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
নিম্নলিখিত বিষয় মেনে চললেও আপনার সার্ভিকাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে পারে
আপনার বয়স ২৬ বা তার কম হলে, আপনি যদি ইতিমধ্যে টিকা না নিয়ে থাকেন তবে একটি এইচপিভি টিকাটি নিয়ে নিন।
ধূমপান করবেন না।
এবং সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করুন।