স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসাইনের বিরুদ্ধে কাজ না করে বিল তোলা, আত্মীয়কে কাজ পাইয়ে দেয়া, ঘুস আদায়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রধান প্রকৌশল দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইনের কিছুই হচ্ছে না, সে সকলকে ম্যানেজ করে মহম্মদপুরে বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে তার দপ্তরের কার্যসহকারী নাজমুল হোসেন সাদ্দামের স্ত্রীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাহিয়ান ট্রেডার্স কে কাজ পাইয়ে দেন। কিন্তু নাহিয়ান ট্রেডার্স এর ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্রের অংশ গ্রহণের যোগ্যতাই ছিলনা। অভিযোগে আরো জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোঃ সাদ্দাম হোসাইন মহম্মদপুর উপজেলায় সহকারী প্রকৌশলীর আরো এক আত্মীয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “আর এস কর্পোরেশন” কে কাজ পাইয়ে দেন। শুধু তাই নয় কেবল মাত্র একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের অংশ গ্রহণ করিয়েই তিনি কাজ দিয়ে দেন এবং নেপথ্যে তিনি নিজেই ব্যবসা করেন।
জানা যায়, মশাখালী, কলাগাছি ও রাজপাট এলাকায় রাস্তার ইটের সলিংয়ের কাজ করা হয়েছে। যার টেন্ডার আইডি নং- ৯৭১৬০৭, প্যাকেজ নং- ই-টেন্ডার /এডিপি/এমজিআর/এমওএইচ/২০২৩-২৪/১৩। কাজটি তার আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠান আর এস কর্পোরেশনকে দেন এবং দরপত্রে উল্লিখিত ২৫৫ মিটার বিএফএস এর স্থলে ২১৮ মিটার কাজ সম্পন্ন করে সমুদয় বিল উত্তোলন করেন। এছাড়াও উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের ঠাকুরেরহাট নামক বাজারে ওয়াশ ব্লাকের নামে কোনো কাজ না করেই সমুদয় বিল উত্তোলন করেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসাইন ।
আরো জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্টের ১৩ তারিখে ঘুস আদায়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসাইনের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী (এলজিইডি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো- মেসার্স আজমাইন ট্রেডার্স, মেসার্স করিম ট্রেডার্স, জিনিয়া জাইফা ট্রেডার্স, মেসার্স রাজু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স নভেরা সারাহ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আজিফা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জি এম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ঢাকা ট্রেডার্স, মেসার্স এম এ্যান্ড এম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রাজিয়া এন্টারপ্রাইজ, মাহির এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আল-রাফি ট্রেডার্স ও মেসার্স আশিক এন্টারপ্রাইজসহ মোট ২৬টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা দুইটি অভিযোগপত্র এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর জমা দেন।
ঠিকাদার এস এম শাহারিয়ার, মোঃ আজিজুল মিয়া, মোঃ হাফিজুর রহমান, মোঃ এনামুল হক, সৈয়দ আব্দুল্লাহ ফারুক, মোঃ করিম হোসেনসহ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা জানান, প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসাইনের অতিরিক্ত ঘুস দাবি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তারা অতিষ্ঠ। তার দাবি পূরণ করা না হলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া এবং বিল আটকানোর হুমকিসহ নানা ধরনের হয়রানি করেন তিনি। তাকে অবিলম্বে মহম্মদপুর থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, মোঃ সাদ্দাম হোসাইনের কারণে পদে পদে হয়রানি হতে হয়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত ঘুস দাবির কারণে আমরা অতিষ্ঠ। তাকে ঘুস না দিলে কোনো কাজই করা যায় না। অফিসে বসে বা বাইরে থেকেও ঘুস দাবি করেন। এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না।
এছাড়া চূড়ান্ত বিলের জন্য প্রত্যয়ন নিতে গেলে কাজের চুক্তি মূল্যের উপর ঘুস দাবি করেন প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইন। কোনো কাজের রিভাইজ বা রিকাস্টের জন্য গেলে সাইট পরিদর্শন না করে বাস্তবে কাজ না দেখে ঘুস দাবিসহ ব্যাচ ঢালাই, ছাদ ঢালাই কাজের জন্যও ঘুস নিয়ে থাকেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসাইন অফিসে না থাকায় মুঠোফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা।