ঢাকামঙ্গলবার , ৩০ জুলাই ২০২৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’কি সত্য উদঘাটন করতে পারবে’?

বিশেষ প্রতিবেদক
জুলাই ৩০, ২০২৪ ১০:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে সারাদেশে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় ২ শতাধিক ছাত্রজনতার মৃত্যু হয়েছে। সংঘাত-সংঘর্ষ ও গুলিতে আহত হয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণমানুষ। আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের উপর চলছে নির্যাতন-নিপিড়ন। ব্লক রেইডের মাধ্যমে চলছে গণগ্রেফতার। এই সব হত্যা, নির্যাতন ও গণগ্রেফতারের ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে গত ২৯ জুলাই‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’গঠন করা হয়েছে।শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিত যশা ব্যক্তির সমন্বয়ে এই ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’গঠিত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যার বিচার ও গায়েবি মামলায়- গ্রেফফতার ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে এক আইনজীবী সমাবেশে ৯ সদস্যের জাতীয় গণতদন্ত কমিশন ঘোষণা হয়।
কমিশনের সদস্যরাহলেন- আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, সিনিয়র আইনজীবী জেড আই(জহিরুল ইসলাম) খান পান্না, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আরহক, অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা।বিচারপতি মো. আব্দুলমতিন ও এডভোকেট সুলতানা কামাল এ কমিশনের যুগ্ম-সভাপতি এবং কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে যুগ্ম ভাবে কাজ করবেন অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান ও মাহা মির্জা।এ ছাড়া এই গণতদন্ত কমিশনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন- সিনিয়র আইনজীবী তোবারক হোসেন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ্খা ন, শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপন, আইনজী বীরাশনা ইমাম, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এ দিন আইনজীবী সমাজের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আইখান পান্না, সারা হোসেন, মোবারক হোসেন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অনীক আর হক, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খানপ্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।
আইনজীবী সমাবেশে জেড আইখান পান্না বলেন, ছাত্রদের ৮ দফা দাবি খুবই যৌক্তিক ছিল। এই ছাত্ররাই কিন্তু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিল বটতলা থেকে। পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত দেখিনি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দাবি নিয়ে এত গুলো ছাত্রকে হত্যা করা হয়। রাতের অন্ধকারে কেন ব্লক রেইড দিয়ে নিরিহ ছাত্র ও সাধারণ জনগণকে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হবে, কোন অধিকারে। কোন আইন এই অধিকার দিয়েছে। আমরা ধিক্কার জানাই। যে রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করে ছিলাম। পদে পদে সরকার তা বরখেলাপ করছে।তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের প্রতি আবেদন তারা যেন আপিল বিভাগের নির্দেশনামান্য করে। যাচাই-বাছাই না করে শিশুদের রিমান্ডে পর্যন্ত দিচ্ছে। আপনারা কী বিচারক, না কসাই। কোটা আন্দোলনে এই গণ হত্যা জাতির জন্য কলঙ্ক হয়ে থাকবে। এই বিচারের ভার জনগণের ওপর দিলাম। আমরা আইনজীবী হিসেবে একটা গণতদন্তক মিশন গঠন করেছি। যেটা তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে।
এরপর গণমাধ্যমে পাঠানো গণতদন্ত কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধীছাত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে সহিংসতার সূত্রপাত। বিশেষকরে এই সহিংসতার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এলে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের বুকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে। যার ভিডিও চিত্র বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যখন এ ঘটনার মামলা করে তখন এ হত্যার জন্য সাধারণ ছাত্র এবং জনগণকে দায়ী করা হয়। এতে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে। এ সব ঘটনায় সত্য উদঘাটনের দাবি উঠেছে। এ ঘটনায় পত্রিকার হিসাবে অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হলেও, সরকারি হিসাবেতা ১৪৭ জন।আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেফতার সহ নানান সহিংস উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং তাতে সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযেগ উঠেছে।
এ সব ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আবশ্যকতা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েক জন খ্যাতিমান ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’গঠন করা হয়েছে।জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে সব সচেতন ব্যক্তিকে বৈষম্যবিরোধীছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১ জুলাই থেকে সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুলিবর্ষণ, হুমকি, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে পাঠানোর জন্য শিগগির আহ্বান জানানো হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই তদন্ত কমিশন কি পারবে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে। এ প্রশ্ন সবার মনে উদয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।কারণ বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতে নির্বঘ্নে তদন্ত কার্যক্রম চালানো কতটা সম্ভব হবে। এই কমিশনের সদস্যদের উপরও নানা ধরনের চাপ শুরু হতে পারে। সব কিছুকে উপক্ষো করে তারা কি সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশে একটি বিষয় এখন বেশ প্রচলিত আছে যে কোন ঘটনার তদন্ত কমিটি বাক মিশন ঘটন করা মানে এ বিষয়টিকে ধামা চাপা দিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত যত ঘটনার যত তদন্ত কমিটি বাক মিশন গঠিত হয়েছে তাদের বেশির ভাগেরই ফলাফল জনগণের সামনে দৃশ্যমান নয়। তদন্ত কমিটির কোন রিপোর্টই প্রকাশকরাহয়নি। তবে এই হতাশারমধ্যেওএকটিআশারনজিরআমাদের সামনেরয়েছে।বাংলাদেশে ইতিপূর্বে এ ধরনের একটি গণতদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিল। সেটি ১৯৯৩ সালে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে গণআদালত বার্ষিকীতে অধ্যাপক জাহানারা ইমাম একটি গণতদন্ত কমিশন ঘোষণা করে ছিলেন। ওই তদন্ত কমিশন এক বছর পর তাদের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে জনসমাবেশে পেশ করে ছিল। ওই গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন কবি বেগম সুফিয়া কামাল। গণতদন্ত কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন,শওকত ওসমান, কে এম সোবহান, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, অনুপম সেন, দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, খান সারওয়ার মুরশিদ, কবি শামসুর রাহমান, এডভোকেট শফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন।গঠিত গণতদন্ত কমিশন ৮ জন যোদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের ২য় বার্ষিকীতে ইঞ্জিনিয়াার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেছিলেন।এরপর এই সমাবেশে তদন্ত কমিশনকে আরও ৮ জনযুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্তকরার ঘোষণা দিয়েছিল। ওই গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে তখন যুদ্ধাপরাধীদের কোন বিচার বা শাস্তি না হলেও পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের যথেষ্ট সহায়তা করেছে।