ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারাদেশে ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। গোটা বাংলাদেশ তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যেই সরকার ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করে, যা সময়-সময় শিথিল করে এখনো বলবৎ রয়েছে।কারফিউর আগেই ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে মুঠোফোনে ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধকরায় দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮ জুলাই রাত পৌনে ৯টা থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। ৫দিন পর ২৩ জুলাই রাতে সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। ২৪ জুলাই সারা দেশেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়। ২৮ জুলাই বিকেল থেকে মুঠোফোনে ফোর-জিইন্টারনেট চালু করা হয়। তবে ফেসবুকসহ মেটার মালিকানাধীন অ্যাপগুলো ও টিকটক বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার ও টিকটক বাংলাদেশে ঘোষণা দিয়েই ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে।
ফেসবুক বন্ধ করায় দেশে এফ-কর্মাসে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ফেসবুক এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগ বা প্রতিদিনের সুন্দর সুন্দর ছবি- কথা প্রকাশের মাধ্যম নয়। ফেসবুক অনেকের জীবিকার উৎস। ছোট ছোট লাখ লাখ উদ্যোগ ফেসবুক ভিত্তিক।এ জন্য ‘এফ-কমার্স’একটি বিশেষায়িত খাত এখন। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি, পণ্যের প্রচারণা চালাতে হয় অনেককে। একটি জাতীয় দৈনিকের গত ২৮ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ফেসবুক বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে এফ-কমার্সে।
করোনা মহামারির বিপর্যয়ের সময় ও এরপর থেকে অনেকের জীবন ধারণের মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই ফেসবুক। নারী উদ্যোক্তাদের ফেসবুক গ্রুপ উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) ট্রাস্টের সদস্য সংখ্যা করোনার সময় ১০ লাখ হয়ে ছিল। এখন এর সদস্য প্রায় ১৫ লাখ। এর প্রায় সবাই ফেসবুক ভিত্তিক উদ্যোক্তা। নানা সূত্রের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ফেসবুকে ছোট-বড় উদ্যোক্তার সংখ্যা কম বেশি ৫লাখ। পোশাক থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঘরে তৈরী খাবার, হাস্ত শিল্প সামগ্রী এমনকি ফুলগাছ পর্যন্ত ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তারা বিক্রি করে থাকেন। এমন অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই আছেন, যাদের ‘দিন আনি দিনখাই’অবস্থা। ফেসবুক পোস্ট দিলে বিক্রি বাট্টা হয়, নাহলে নেই। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক‘ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউন’- এর কারণে এইএফ- কমার্স ভিত্তিক উদ্যোক্তরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন।তাদের ব্যবসা এখন বন্ধ। আয় রোজগার নেই। অনেককেইনা খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
তবে আবাক করা বিষয় হচ্ছে জীবন-জীবিকার জন্য সাধারণ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছেন না, কিন্তু মন্ত্রীরা‘গুজব’ ঠেকাতে তাদের ভাষায় অগ্রহণযোগ্য সেই মাধ্যমই ব্যবহার করছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এটা তো এক ধরনের মশকরাই। তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে যখন প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্মেদ এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন নিজস্ব ডিজিটালপ্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে, নিজস্ব ওয়েবসাইট বানাতে। তিনি কি জানেন এই অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি বা প্ল্যাটফর্ম তৈরির আর্থিক সামর্থ্য সত্যিই আছে? প্রতি মন্ত্রী মাঝে মধ্যেই বলেন, আমাদের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করা হবে। এসব কথা সাধারণের সঙ্গে উপহাসের মতোই শোনায়।