ইন্টারনেট সেবা খাতে ক্ষয়ক্ষতি ও নাশকতার যে অভিযোগ রয়েছে তা তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে গ্রাহক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। শনিবার (২৭ জুলাই) মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অবস্থিত ডাটা সেন্টার পরিদর্শন শেষে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি , বিটিআরসি, এবং খাত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ইন্টারনেটের নিরাপত্তা, গুজব প্রতিরোধ এ ব্যর্থতার দায় নোয়াখালীর খাজা টাওয়ারের ডাটা সেন্টারের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা গত দুদিন আগে দেশের স্বনামধন্য গণমাধ্যমে জানতে পারলাম খাজা টাওয়ার ডাটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ আইএসপি এবি এবং বিটিআরসি ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বারবার ইন্টারনেট বন্ধের ধারে চাপিয়েছেন ডাটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে। আজ আমরা একটি প্রতিনিধিনি দল সশরীরে এনআরবি, ঢাকা কুল, সহ ভবন পরিদর্শন করে এবং ভবনের অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারি এখানে কোন ক্ষয় ক্ষতি হয়নি। একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলা দরকার, ডাটা সেন্টার হল কেবলমাত্র সার্ভার সংরক্ষণাগার অর্থাৎ এক প্রকার লকার। তিনি আরো বলেন,গত ১৬-১৭ তারিখে সীমিত পরিসরে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও ১৮ তারিখ সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা সহ মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমরা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এর সভাপতি উদ্ধৃতি দিয়ে জানতে পারি যে মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অবস্থিত ডাটা সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার কারণে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে গত ২৪ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখে ন্যারো ব্র্যান্ডের ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে টেলি যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, গুজব প্রতিরোধে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন বিভিন্ন স্থানে ফাইবার কাটা এবং ডাটা সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার কারণে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। আমাদের জানামতে বিশ্বে একটানা সাত দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকা নজির বিহীন। এমনকি যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা ও ইউক্রেনে ইন্টারনেট সেবা এত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকেনি। ইন্টারনেট বন্ধের ফলে গ্রাহকের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, বিমানে টিকেট সংগ্রহ, এমনকি গ্যাস বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় গ্রাহকদেরকে থাকতে হয়েছে। ব্যাংকে টাকা থাকা সত্ত্বেও টাকা উত্তোলন করতে না পেরে অনেকে অভুক্ত ছিলেন। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ফলে মূল ধারার গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত না হওয়ায় গুজব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে প্রাণহানি ও ভয়াবহ সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস এবং লুণ্ঠন করা হয়। গুজব এবং উস্কানিমূলক পোস্ট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মেটা , ইউটিউব, টিক টক, এমন কি আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এবং আইসিটি ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা মনে করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিকে জরিমানার পাশাপাশি আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কেউ জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
ইন্টারনেট খুলে দেবার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, এবং দেশের ১৮ কোটি মানুষের জোরালো দাবি রয়েছে। তাই আমরা মনে করি বিষয়টি সারা বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের সঠিক তথ্য একই সাথে ইন্টারনেট বন্ধ করার যৌক্তিকতা এবং কারণ উদঘাটনে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক টেলিযোগ ইউনিয়নের সহায়তায় দেশের প্রযুক্তি ও টেলিযোগ খাতের বিশেষজ্ঞ ও স্টেক হোল্ডার এবং গণমাধ্যম ও গ্রাহকদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা জরুরী বলে আমরা মনে করি।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমরা শুধু গ্রাহক হিসেবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, হয়েছে সফটওয়্যার, আউটসোর্সিং, মোবাইল ব্যাংকিং, টেলিকম অপারেটর, আইএসপি, ইলেকট্রিক ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট মিডিয়া ,অনলাইন, আইআইজি,এনটিটিএন, টাওয়ারকো, হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ ডিজিটাল সেবার সাথে যুক্ত সকল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিশেষ।
পরিদর্শনকালে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি লায়ন শ্যামল হাজরা, মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, নির্বাহী সদস্য এডভোকেট মনিরুজ্জামান শাশ্বত মনির, কেন্দ্রীয় সদস্য প্রকৌশলী আবু সালেহ, তথ্য ও দপ্তর সম্পাদক শেখ ফরিদ, মোঃ সাগর।