শুধু চাকরিতে প্রবেশের সময় নয়, সন্দেহ হলে যে কোনো সময় সরকারি চাকরিজীবীদের ‘ড্রাগ অ্যাবিউজ টেস্ট’ করা হবে। আজ বুধবার (১৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে সিদ্ধান্ত ছিল চাকরিতে (প্রবেশের সময়) ডোপ টেস্ট হবে। তবে, একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, ৭২ ঘণ্টা পরে এটা পরীক্ষা করলে (মাদকাসক্ত কি না) বোঝা যায় না। সেজন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে চাকরিরত যারা আছেন, সন্দেহজনক হলে যে কোনো সময় ডোপ-টেস্ট করা হবে। টেস্টের নামটিও পরিবর্তন করা হচ্ছে। ডোপ টেস্টের (মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ পরীক্ষা) নাম বদলে হচ্ছে ‘ড্রাগ অ্যাবিউজ টেস্ট’। এজন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করা হবে।’
সরকারি চাকরিতে কর্মরত অনেকের বিরুদ্ধে প্রায়ই মাদক গ্রহণের অভিযোগ আসে। সেজন্য বছরে একবার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ডোপ টেস্টের (মাদক পরীক্ষা) পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চূড়ান্ত হতে যাওয়া ডোপ টেস্ট বিধিমালাতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর তা বাস্তবায়ন করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ডোপ টেস্টের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এবার কর্মরতদেরও ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরতরা বলছেন, বছরে একবার ডোপ টেস্ট হলে চাকরিরত মাদকাসক্তরা চিহ্নিত হবেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে আমরা প্রায়ই মাদক গ্রহণের অভিযোগ পাই। সেজন্য প্রতি বছর একবার ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্তরা ধরা খাবেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডোপ টেস্টে যারা পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে অন্যরাও সতর্ক হবেন।
বর্তমানে মাদকাসক্তদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে একেবারে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সীরাই মাদকে আসক্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে নিজেকে। সমাজের জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা হুমকির কারণ। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি বেশ হুমকিস্বরূপ। এসব কারণেই মূলত ডোপ টেস্ট করানো হয়। যেসব কারণে ডোপ টেস্ট করানো হয়ে থাকে তা হলো- মাদকসেবী শনাক্ত করতে, ট্রাফিক আইনের জন্য, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য, খেলোয়াড়দের জন্য, আইনি জটিলতার এড়াতে ও ফরেনসিকের প্রয়োজনে।
বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সকল চাকরিতে প্রবেশকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষার সনদ বা ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। আবার চাকরিতে থাকাকালীন কোনো কর্মচারি বা কর্মকর্তার আচরণ সন্দেহজনক হলে যে কোনো সময় তার ডোপ টেস্ট করানোও হতে পারে।
যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ওই নেশাজাতীয় পদার্থের কিছুটা হলেও থেকে যায়। আর সেটিই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। কোনো ব্যক্তি আদৌ মাদকাসক্ত কি না তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হয়। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মূত্র বা রক্ত, আবার কখনো দুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মাদক গ্রহণ করা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শেষ ১ সপ্তাহে মুখের লালার মাধ্যমে, শেষ ২ মাস রক্তের মাধ্যমে, শেষ ১২ মাস বা ১ বছরে চুল পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায় মাদকের নমুনা।
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর প্রণীত খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু মাদক পরীক্ষা করা হয়। যেমন- ডায়াজেপাম, লোরাজেপাম, অক্সাজেপাম, টেমাজেপাম, কোডিন, মরফিন, হেরোইন, কোকেন, গাজা, ভাং, চরস, অ্যালকহোল বা মদ, ফেনিসিডিল, ইয়াবা ও এলএসডি।
ইউরিন বা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হয়। কোনো মাদক সেবনের পর মুখের লালা বা থুথু পরীক্ষা করে শনাক্ত করা যায় তার উপস্থিতি। যেমন- গাজা সেবন করার পরবর্তী ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত মুখের লালা থেকে এই মাদক পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায় মুখের লালা পরীক্ষা মাধ্যমে।
শরীরে মাদকের কোনো উপস্থিতি আছে কি না তা পরীক্ষার অন্যতম এক উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা। আপনার শরীরে রক্ত টেস্টের মাধ্যমে মাদকের উপস্থিতির সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
ডোপ টেস্টের ক্ষেত্রে চুল পরীক্ষা করার মাধ্যমেও মাদক শনাক্ত করা হয়। যে কোনো মাদক গ্রহণের পরবর্তী ৯০ দিন পরেও চুল পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধরা পড়ে সহজেই।
ট্রাফিক পুলিশরা সন্দেহজন চালকদের নিঃশ্বাস পরীক্ষার মাধ্যমে মাদক শনাক্ত করেন। অ্যালকোহল ডিটেক্টরের মাধ্যমে এই টেস্ট করা হয়।