ঢাকারবিবার , ৯ জুলাই ২০২৩
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আইনমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে
দাপুটে অফিস সহকারীদের কাছে জিম্মি রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স

বিশেষ প্রতিবেদক
জুলাই ৯, ২০২৩ ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

‘বাবা-মা’ তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ- যেন তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এ কারণে মূর্তমান আতঙ্কে রূপ নিয়েছেন তিনি। তিনিই যেন সর্বেসর্বা। পারিবারিক ঐতিহ্য খুব একটা না থাকলেও আইনমন্ত্রীই তার ভরসা। ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জয়নাল আবেদীনের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসসহ রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ। জয়নাল আবেদীনসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারির অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারে সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সুনাম এখন তলানীতে। দৈনিক পাঞ্জেরী’র তথ্যানুসন্ধানে এবারের প্রতিবেদনে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের কতিপয় অফিস সহকারীর নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে পাঠকদের জন্য।
দেশের ৩ পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা এবং উপজেলা মিলে ৪শ’ ৯৭টি মূল সাব রেজিস্ট্রি অফিস এবং ক্যাম্প অফিসসহ ৫০৫টি রেজিস্ট্রি অফিসের নিয়োগ অভিন্ন বিধি বিধানে পরিচালিত হলেও কৌশলগত কারণে ঢাকা জেলার শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সরকারি নিয়ম নীতি এবং রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল অনুসরণ না করে গায়ের জোরে আইনমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদ সৃজন করে জেলা কোটা উপেক্ষা করে শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কতিপয় দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারি ও অর্থলিপ্সু কর্মচারিকে নিয়োগ দেওয়া হয় বিগত কয়েক বছর পূর্বে। যা রেজিস্ট্রেশন পরিবারে আজীবন একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে বিজ্ঞমহল মনে করছেন। কারণ নকল নবীশগণের পদোন্নতির মাধ্যমে মোহরার এবং টিসি মোহরারের সিনিয়রিটির ভিত্তিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মচারিগণকে অফিস সহকারী (কেরানী) নিয়োগের সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। নিয়োগবিধিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে নিয়োগ পাওয়া ‘সৌভাগ্যবান’ কর্মচারিরা হলেন- জয়নাল আবেদীন, ইমতিয়ার আলম (রিমন) এবং সামিউল ইসলাম। মূলত প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল সম্পূর্ণভাবে পদদলিত করে নামসর্বস্ব একটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩ জন কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তর। নিয়োগের সময় এদের কারো কম্পিউটার অপারেটিং সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছিল না বলেও তৎকালীন সূত্র নিশ্চিত করেছে। রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল বহির্ভূত নিয়োগ পাওয়া এ দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্ছাচারি কর্মচারিরা (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর) প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ পথে উপার্জন করলেও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারি যেমন নকল নবীশ, উমেদার, পিয়ন, ঝাড়ুদার সকলেই তাদের কাছে জিম্মি। এর একটি কারণ তারা আইমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন। যে কারণে এদের হাত অনেক লম্বা। ফলশ্রুতিতে কর্মচারিরা থাকেন আতঙ্কে। ক্ষমতার শিকড় অনেক গভীরে। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না। বিশেষ করে ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ জয়নাল আবেদীনের আচার ব্যবহার অত্যন্ত অমার্জনীয়। তিনি ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের প্রতিটি নকল নবীশ, উমেদার, ঝাড়ুদার, নাইটগার্ড, দলিল লেখক সকলের সাথে ধমকের সুরে তো বটেই, কখনও কখনও কর্মচারিদের সঙ্গে বাবা মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে অমার্জনীয় আচার ব্যবহার প্রদর্শন করেন। যার দায় যেন সব আইনমন্ত্রীর! জয়নাল আবেদীনের চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন বাবু আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটাই জয়নাল আবেদীনের বড় অস্ত্র। ভাবখানা যেন তিনিই আইনমন্ত্রী! সাব রেজিস্ট্রারও তাকে সমীহ করে চলেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত প্রতিদিনের অর্থ বেশিরভাগ জয়নাল আবেদীনের পকেটস্থ করতে হবে। ভয়ে সকলে তা মেনেও নেন। জয়নাল আবেদীনের অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলছে। সাব রেজিস্ট্রারের কাছে বিচার দিয়েও ভুক্তভোগী কর্মচারিরা বিচার পান না। উল্টো আরও হেনস্থা হতে হয়। যে কারণে কেউ বিচারও প্রত্যাশা করেন না। নিরবে নিভৃতে বিচারের বাণী ঐ চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কর্মচারিরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। ভুক্তভোগী কর্মচারিগণ এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারি জয়নাল আবেদীনের অশালীন আচরণের বিচার দাবি করেছেন। অন্যথায় তাকে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স থেকে ঢাকার বাইরে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, জয়নাল আবেদীন এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সামান্য বেতন ভুক্ত একজন কর্মচারি তিনি। আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বাবুর ছোট ভাই পল্লবী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ সামিউল ইসলাম। অর্থাৎ এই পদটি শুধুমাত্র ‘অফিস সহকারী’ নামে রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ধানমণ্ডি এবং শ্যামপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসেও একইভাবে মোহরার এবং টিসি মোহরারের পদোন্নতির মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মান নির্ণয়কের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সম্পূর্ণ ক্ষমতার জোরে উক্ত তিনজন কর্মচারিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রহস্যজনক কারণে। যা নিয়ে ইতিপূর্বে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে রেজিস্ট্রেশন পরিবারের অফিস সহকারী পদবঞ্চিতরা। কিন্তু যৌক্তিক এ আন্দোলন কর্তৃপক্ষের টনক নড়াতে পারেনি।
রেজিস্ট্রি অফিসের প্রচলিত সাংগঠনিক কাঠামো চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে পল্লবী, ধানমণ্ডি ও শ্যামপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ নিয়োগের মধ্যদিয়ে। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বিজ্ঞ পার্লামেন্টিরিয়ান আনিসুল হক এসব প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন কি না? কার স্বার্থে নিবন্ধন অধিদপ্তর এ ধরনের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে বিব্রত কিংবা সমালোচিত করেছে? শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের এই ৩ জন দুর্নীতিবাজ কর্মচারিদের মধ্যে বদলিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে ঐ সাংগঠনিক কাঠামোবহির্ভূত নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে। কেননা তাদের নিয়োগের পরপরই ঐ ৩ জন দুর্নীতিবাজ কর্মচারিই ঘুরেফিরে বদলি হচ্ছেন শ্যামপুর, পল্লবী এবং ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জয়নাল আবেদীন এখানে প্রায় ৪ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। যে কারণে তার স্বেচ্ছাচারিতামূলক কর্মকাণ্ডও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ) আলাউদ্দিন বাবুর দাপটে এরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মচারিদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সরকারের ভাবমূর্তি চরম সংকটে পড়বে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
সূত্র জানায়, উপরোল্লিখিত দুর্নীতিবাজ কর্মচারিগণ রাজধানী ঢাকা ও তাদের নিজ এলাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। সচেতন মহল স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালিপনা ও দুর্নীতি বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নিবন্ধন অধিদপ্তর এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ধানমণ্ডি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জয়নাল আবেদীন দৈনিক পাঞ্জেরী’কে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এসব কর্মচারিদের শাসন করতে হয়, না হলে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে’। তবে গালাগালির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
পল্লবী ও শ্যামপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সামিউল ইসলাম ও ইমতিয়ার আলমের (রিমন) সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, এমপি’র মুঠোফোনে গতকাল রাতে দৈনিক পাঞ্জেরী’র পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।