ঢাকাশনিবার , ৭ মে ২০২২
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টেকসই উন্নয়নে মা

মোসা. আফরোজা নাইচ রিমা
মে ৭, ২০২২ ১০:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

টেকসই উন্নয়ন এবং মা এক এবং অভিন্ন। টেকসই উন্নয়ন যেমন পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবে, পৃথিবীর সকল মা-ই তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ এর কথা ভাবে। মা যেন সন্তানের কল্যাণ, উন্নয়ন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না। উন্নয়ন পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন এবং মা একে অপরের পরিপূরক। মিশেল ওবামা বলেন, ‘আমাদের পরিবারে মায়ের ভালোবাসা সবসময় সবচেয়ে টেকসই শক্তি। আর তার একাগ্রতা, মমতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের মধ্যে দেখে আনন্দিত হই।’ ব্রিটিশ লেখিকা জেকে রাউলিং বলেন, ‘মায়ের ভালোবাসা এতোটাই শক্তিশালী যে এটি সবসময় নিজের চিহ্ন রেখে যায়। এতো বেশি গভীর আর শক্তিধর সেই ভালোবাসা, যা সারাজীবন সুরক্ষা কবজের মতো আমাদের ঘিরে থাক।’
‘মা’ শব্দটি ছোট অথচ এত মধুর, যার গভীরতা কখনো পরিমাপ করা যায় না, যাবে না। মা একজন সন্তানের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত আশ্রয়স্থল। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। গর্ভধারণের মতো জটিল বিষয়টি একমাত্র মায়ের পক্ষেই সম্ভব। তাই সামাজিক, সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় এবং বৈশ্বিক অবস্থান থেকেও মাকে বিশ্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে, মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “মা দিবস” হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। কথিত আছে, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, কেননা সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসেবে পালন করা হত। তবে সতের শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। মায়ের সঙ্গে সময় দেওয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তার দিনটির কর্মসূচিতে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। মা দিবসের উপহার সাদা কার্নেশন ফুল খুব জনপ্রিয়। আর বাণিজ্যিকভাবে, “মা দিবস” বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্ড আদান-প্রদানকারী দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে “মা দিবস”-এ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়।
১৯০৭ সালের ১২ মে প্রথমবার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরে ‘মাদার্স ডে’ পালিত হয়েছিল। অ্যানা জার্ভিস নামের এক মার্কিন নারী তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিসের মৃত্যুদিনটি একটু অন্যভাবে পালন করার কথা ভেবেছিলেন। অ্যান সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারীদের জন্য কাজ শুরু করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করতেন তিনি।
একদিন ছোট মেয়েটির সামনেই ধর্মপ্রাণ অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনো মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ তারা প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। এটা তাদের অধিকার’। মায়ের প্রতিটি শব্দ মনে রেখেছিলেন অ্যানা। আর সেই কারণেই অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকে (১২ মে, ১৯০৭) সারাবিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন তিনি। তারপর থেকে মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা দিবস।
ইসলাম ধর্মে মা সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে- আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। হিন্দু ধর্মে মা সম্পর্কে সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। ক্যাথলিক ধর্মে, দিনটি বিশেষভাবে ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার পূজায় সমর্পিত।
মা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা একে অপরের পরিপূরক। মূলত মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। অবশ্য তখন এ ভাতার পরিমাণ কম ছিল। বর্তমানে তা ৮০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে দুই লাখ পঁচাত্তর হাজার ল্যাকটেটিং মায়েদের ভাতা দেয়া হচ্ছে। এর সংখ্যা অনেক বেশি। সন্তানসম্ভবা মায়েদের আইসিভিজিডি প্রকল্পের আওয়তায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল ও প্রতি পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।
বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীদের জন্য অনেক কাজ করছে। কারণ একটি সমাজে সামাজিক দায়বদ্ধতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ লাখ দরিদ্র গর্ভবতীর জন্য ৬৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ৭ লাখ ৭০ হাজার দরিদ্র গর্ভবতীর জন্য ৭৩৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রশিক্ষণের বিষয় নির্বাচন করে মাতৃত্বকালীন ভাতাপ্রাপ্ত এই দরিদ্র মায়েদের স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ মডিউলে সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে ০-৪ বছর পর্যন্ত ল্যাকটেটিং মায়ের ভাতা দেয়া হচ্ছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড বেনিফিটের’ একটা প্রোগ্রাম দ্রুত শুরু করব যাতে মা ও শিশু দু’জনই উপকৃত হয়। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে মাতৃত্বকালীন ভাতা গুরুত্ব পেয়েছে।
নারী ও শিশুর কল্যাণে বাংলাদেশে অনেক কাজ হচ্ছে।আজাদ প্রোডাক্টস এবং অন্যান্য কিছু সংস্থা বিশ্ব মা দিবসে রত্নগর্ভার মতো পুরস্কার দিয়ে মা’দেরকে করছে সম্মানিত। যেখানে ২০২১ সালে আমার মায়ের মতো অনেক মা হয়েছে রত্নগর্ভা মা। যদিও এ মর্যাদা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। মাতৃত্বকালীন ভাতা ও এর আওতা বৃদ্ধি তেমনি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। যেহেতু শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ এবং একজন সুস্থ ও আদর্শ মা-ই পারেন আগামী দিনের একজন সম্ভাবনাময় মানুষ উপহার দিতে, সে কারণে জাতীয় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা উচিত। মাতৃত্বকালীন ভাতা যাতে উপযুক্ত মায়েরা সঠিকভাবে পেতে পারেন এবং এ ভাতার সুবিধাভোগী নির্বাচনে যাতে কোনোরকম স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
দারিদ্র্য বিমোচন তথা- উন্নয়ন তলরেখা হলো মা। মা হলো এসডিজি’র একের ভেতর সতের। ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ সাম্যতা ও ন্যায্যতার শোষণহীন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রতিফলন। ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজন শুধু ‘এক মা এক লাখ টাকা’ বাজেট বরাদ্দ। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দারিদ্র্য বিমোচনে মুজিবনগর-টুঙ্গীপাড়া-চাটখিল-কালিগঞ্জ-রামগতি-দৌলতখানসহ ১০ উপজেলায় পাইলট আকারে বাস্তবায়িত ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ কার্যক্রম ন্যূনতম ১শ উপজেলায় বাস্তবায়ন প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে ধীর গতিতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এত করে সম্পদ বৈষম্য সংকোচিত হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ মডেল শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বেও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।
একজন ভালো মা হওয়া কঠিন, কারণ তার স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত না হলে বেড়ে ওঠা কঠিন। তাই মা আবেগের এক আশ্রয়, আবার কখনো মা সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, অধ্যবসায় ও সাফল্যের ছায়া নিয়ে হাজির হন। জীবনের যেকোনো স্তরে মায়ের অবদান সীমাহীন। বিশ্বের ইতিহাসে মায়েরা আসন পাক সকল কিছুর ঊর্ধ্বে, টেকসই উন্নয়নে মায়েদের অবদান হোক সার্বজনীন, সকল দেশ কালের ঊর্ধ্বে মা পাক টেকসই ভালোবাসার শক্তি। সার্থক হোক বিশ্ব মা দিবসে মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

লেখক : সিনিয়র ইনফরমেশন অফিসার, পিআইডি, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।