মহামারি করোনার প্রকোপ কাটিয়ে এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে আমদানি-রপ্তানিও বাড়ছে। তবে রপ্তানির তুলনায় আমদানি না বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতিও বাড়ছে সমানভাবে। এর ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয়েছে তিনগুণ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান চূড়ায় উঠছে। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১০ কোটি (৯.১০ বিলিয়ন) ডলার। যা গত বছরের (২০২০-২১) একই সময়ে ছিল ৩৪৯ কোটি ৬০ লাখ (৩.৪৯ বিলিয়ন) ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম চার মাস বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে তিনগুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দুই হাজার ৩৯০ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে দেশ। যা গত বছরের (২০২০-২১) একই সময়ের চেয়ে ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এক হাজার ৫৭৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল দেশে।
২০২১-২২ অর্থবছরের চার (জুলাই-অক্টোবর) মাসে রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে এক হাজার ৪৮০ কোটি ১০ লাখ (১৪.৮০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন। যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসের চেয়ে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯১০ কোটি ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ কোটি ৯০ লাখ (৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলারে। গত একমাস আগেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ বা ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এক মাসের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ২৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ৩৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। উদ্বৃত্ত থাকা মানে নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না, ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
চলতি অর্থবছেরর প্রথম চার মাসে সেবা খাতের ঘাটতিও বেড়েছে। সেবার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ অন্য দেশকে পরিশোধ করা হয়েছে, সে তুলনায় কম অর্থ এসেছে দেশে। সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে এ খাতে ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।
গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে। গত অর্থবছেরর প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) এই সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। তবে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়।
২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৪ কোটি ডলারে।