সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) উঠতে যাচ্ছে নড়াইলবাসীর স্বপ্নের চারলেনের সড়ক বাস্তবায়ন প্রকল্পটি। এমন সংবাদে খুশি নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একনেকে পাশ হলে যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় প্রকল্পটি এমন দাবি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের। এতে করে শহরের যানযটসহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে নড়াইবাসী।
জানা গেছে, ঢাকাগামী পরিবহনের জন্য ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক হিসেবে কাজ করে। নড়াইল শহরের ওপর দিয়ে যাওয়া এই মহাসড়কের দু’পাশে কয়েকটি মার্কেট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রয়েছে হাট-বাজার, বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঔষধের দোকানসহ নানা স্থাপনা। যার ফলে যানবাহনের চাপে এই মহাসড়কের বিশেষ করে নড়াইল শহরের ভেতর যানজট লেগেই থাকে। এতে করে এ মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের প্রতিনিয়ত কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই যানজটের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে এ মহাসড়কের নড়াইল শহরাংশের ওপর দিয়ে যাওয়া ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, নড়াইল শহরের মধ্যদিয়ে আমাদের স্বপ্নের চারলেনের সড়কটি একনেকে উঠতে যাচ্ছে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নড়াইলবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানায়। তিনি আরও বলেন, সড়ক উন্নয়নে যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে আলোচনা করে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
চারলেনের সড়কটি বাস্তবায়ন হলে শহরের যানযট মুক্ত হবে; এতে করে দুর্ঘটনা কমবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে কিছু অবৈধ দখলদার ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে নড়াইলবাসী ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সরদার আলমগীর হোসেন আলম বলেন, নড়াইল শহরের সড়কটি চারলেন হওয়া অত্যান্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র মতে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে ‘নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্প। আর এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে নড়াইল শহরের সড়ক প্রশস্ত করার মাধ্যমে যানজট নিরসন এবং এই মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রে আরও জানা যায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর মহাসড়কের নড়াইল শহরাংশটি ৫ দশমিক ৫০ মিটার চওড়া। সড়কটির দুই পাশে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, গ্রোথ সেন্টার ইত্যাদি অবস্থিত। ফলে খুলনা বা বেনাপোল থেকে ঢাকার পথে সড়কের এই অংশটিতে সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই থাকে। এ কারণেই নড়াইল শহরাংশের ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে আরও বলেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। পরে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর গত ১৪ জানুয়ারি পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত ও পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করেছে। পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পুনর্গঠিত ডিপিপিতে ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সড়ককে চারলেনে উন্নীত করতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের আওতায় প্রথমত সড়কটির ৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার অংশ চারলেনে উন্নীত করে পুনঃনির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ৭৭ কিলোমিটার সড়ক মজবুত ও প্রশস্ত করা হবে। এর মধ্যে ৫ দশমিক ২৯১ কিলোমিটার হার্ড শোল্ডার ও ৫ দশমিক ৭৯১ কিলোমিটার সার্ফেসিং করা হবে। ২ লাখ ৩০ হাজার ৯০৮ দশমিক ৭১ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, আরএইচডি সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত টি-জাংশন সড়ক উন্নীতকরণ, একটি ৩১ দশমিক ৮২৮ মিটার পিসি গার্ডার সেতু পুনঃনির্মাণ, দু’টি আরসিসি বক্স কালভার্ট পুনঃনির্মাণ, আরসিসি বক্স ড্রেন কাম ফুটপাত নির্মাণ ও ইন্টার-সেকশন ডেভেলপমেন্ট করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে নড়াইল শহরের যানজট নিরসন হবে। পাশাপাশি নড়াইল জেলা সদরের সঙ্গে খুলনা, বেনাপোল ও যশোর জেলার যোগাযোগ নিরবিচ্ছন্ন ও নিরাপদ হবে। যানজট না থাকলে স্থানীয়দের যে শ্রমঘণ্টা বেঁচে যাবে, তাতে বাড়বে উৎপাদনশীলতা। প্রকল্প এলাকার আর্থসামজিক ব্যবস্থারও উন্নয়ন হবে।